১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের গভরমেন্ট অফ ইন্ডিয়া আইন বা মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইন
• এই শাসন সংস্কার দ্বারা কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতা ও আয় সুনির্দিষ্ট ভাবে বন্টন করা হয়।
• কেন্দ্র সরকারের অধীনে ছিল রেল, সামরিক,পররাষ্ট্র,প্রচার (ডাক ও তার) ও মুদ্রা বিভাগ, শুল্ক বিভাগ।
• প্রাদেশিক বিভাগের হাতে ছিল পুলিশ, বিচার, শিক্ষা,স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, সেচ,রাজস্ব, আবগারি সহ বিভিন্ন বিভাগ।
• কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বন্টিত হলেও কেবল কেন্দ্রীয় আইনসভাযই সারা ভারতের জন্য আইন প্রণয়ন করতে পারত।
• আইন সংক্রান্ত প্রস্তাব উত্থাপনের পূর্বে বড়লাটের অনুমতি নেওয়া অপরিহার্য ছিল।
• ৭ জন সদস্য নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহক পরিষদ বা বড়লাটের শাসন পরিষদ গঠিত হয়। বড়লাটের কার্যনির্বাহী সমিতিতে ৭ জন সদস্যের মধ্যে ৫ জন শ্বেতাঙ্গ সদস্য ও ৩ জন ভারতীয় সদস্য ছিলেন।
• বড়লাট তার কাজের জন্য ভারত সচিব ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে দায়ী থাকতেন,ভারতীয় আইনসভার কাছে নয়।
• ভারত সচিবের ক্ষমতা আগের থেকে আরও বাড়িয়ে ভারত সরকারের উপর তার নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করা হয়।
• বলা হয় ভারত সচিব ও তাকে সাহায্যকারীদের বেতন দেওয়া হবে ব্রিটিশ রেভিনিউ থেকে।
• কেন্দ্রে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা গঠিত হয় একটি হলো কাউন্সিল অফ স্টেট বা উচ্চকক্ষ অপরটি হল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি বা নিম্নকক্ষ।
• উচ্চকক্ষের ৬০ জন সদস্যের মধ্যে ২৭ জন বড়লাট কর্তৃক মনোনীত এবং বাকি ৩৩ জন সদস্যকে নির্বাচন করার ব্যবস্থা করা হয়।
• নিম্নকক্ষের ১৪০ জন সদস্যর মধ্যে ৪০ জন মনোনীত এবং ১০০ জনকে নির্বাচন করার ব্যবস্থা করা হয়।
• উভয় কক্ষে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।
• প্রদেশগুলোতে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা চালু হয় আইন, পুলিশ প্রশাসন অর্থ, শ্রম প্রভৃতির দায়িত্ব ছিল প্রাদেশিক গভর্নর ও তার কার্য নির্বাহক সভার
ওপর আর স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিভাগের দায়িত্ব ছিল প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার প্রতিনিধিদের ওপর।
• বলা হয় সম্পত্তির মালিকানা প্রাপ্ত ব্যক্তিরা আয়করের ভিত্তিতে ভোটের অধিকার পাবেন।
• সংখ্যালঘু মুসলিমরা আলাদা নির্বাচনের অনুমোদন পায়।
• লন্ডনে একজন হাই কমিশনার নিয়োগ করা হয় ভারতের জন্য, যিনি ভারতের কাজের দায়িত্বে থাকবেন।
• সর্বোপরি ভারত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের একটি অবিচ্ছেদ অংশ হিসেবে ছিল যেখানে স্বাধীনতার কোন জায়গা ছিল না।
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন
• এই আইনে ব্রিটিশ ভারতীয় প্রদেশ ও দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠনের ব্যবস্থা করা হয়।
• দেশীয় রাজ্যগুলির পক্ষে এই যুক্তরাষ্ট্রের যোগদান সম্পূর্ণ তাদের ইচ্ছাধীন ছিল।
• কেন্দ্রে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হলেও প্রদেশে তা বিলুপ্ত হয়।
• প্রদেশগুলোতে স্বায়ত্তশাসনের ব্যবস্থা করা হয়।
• কেন্দ্রে পাঁচ বছর মেয়াদী দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
• ৬টি প্রদেশে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা গঠিত হয়। যথা বাংলা, মাদ্রাজ, মুম্বাই, বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও আসাম।
• দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার উচ্চকক্ষে ছিল ২৬০ জন সদস্য এবং নিম্ন কক্ষে ছিল ৩৭৫ জন সদস্য।
• নিম্ন কক্ষে ৩৭৫ জন সদস্যর মধ্যে ২৫০ জন ব্রিটিশ ভারতের প্রতিনিধি এবং ১২৫ জন দেশীয় রাজ্যগুলির প্রতিনিধি।
• উচ্চকক্ষে ২৬০ জন সদস্যদের মধ্যে ১৫৬ জন ব্রিটিশ ভারতের প্রতিনিধি এবং ১০৪ জন দেশীয় রাজ্যগুলির প্রতিনিধি।
• শিখ, ইউরোপীয়, ভারতীয় খ্রিস্টান ও অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের স্বতন্ত্র নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।
• মুসলিম সদস্যদের সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে এবং তপশিলি সদস্যদের পুনা চুক্তির ভিত্তিতে পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।
• কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বন্টনের জন্য তিনটি পৃথক তালিকা তৈরি করা হয়। যথা কেন্দ্রীয় তালিকা, প্রাদেশিক তালিকা ও যুগ্ম তালিকা।
• গভর্নর জেনারেল তার কাজের জন্য সরাসরি ভারত সচিব ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে দায়বদ্ধ ছিলেন।
• যুক্তরাষ্ট্রের শাসনভার গভর্নর জেনারেলের অধীনে একটি মন্ত্রী পরিষদের উপর ন্যাস্ত হয়। গভর্নর জেনারেল আইনসভার সদস্যদের মধ্য থেকে তাঁর মন্ত্রী পরিষদের সদস্য দের নিয়োগ করবেন এবং মন্ত্রীরা তাঁদের কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়ী থাকবেন। গভর্নর জেনারেল ইচ্ছা করলে মন্ত্রীদের পদচ্যুত করতে পারবেন।
• কেন্দ্রীয় শাসনের বিষয়গুলিকে সংরক্ষিত এবং হস্তান্তরিত এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়। দেশ রক্ষা, শান্তি-শৃঙ্খলা, পররাষ্ট্র এবং ধর্ম সংক্রান্ত বিষয়গুলি গভর্নর জেনারেল ও তার তিন উপদেষ্টার হাতে ছিল।
• হস্তান্তরিত বিষয়গুলির শাসনভার মন্ত্রিসভার পরামর্শক্রমে গভর্নর জেনারেলের হাতে ন্যাস্ত ছিল।
• কোন আইন রচনার পূর্বে কেন্দ্রীয় আইনসভা কে গভর্নর জেনারেলের অনুমতি নিতে হতো।