উত্তরবঙ্গের নদ নদী গুলির বৈশিষ্ট্য
(১) উত্তরবঙ্গের প্রায় প্রত্যেকটি নদী হিমালয় পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে দার্জিলিং জলপাইগুড়ি ও কুচবিহার জেলার উপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
(২) এই অঞ্চলের বেশিরভাগ নদী হিমালয় পর্বতের বরফ গলা জলে পুষ্ট।
(৩) এছাড়া এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বেশি তাই সারা বছর নদীগুলোতে জল থাকে।
(৪) উত্তরবঙ্গের নদী খাতগুলি পলি বালি নুড়ি প্রভৃতি জমে উঁচু হয়ে যাওয়ায় বর্ষার সময় এইসব নদীতে বন্যা দেখা দেয়।
(৫) ভূমির ঢাল অনুসারে উত্তরবঙ্গের নদীগুলি উত্তর থেকে দক্ষিণ পূর্বদিকে প্রবাহিত।
(৬) উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু নদী পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে এরা খরস্রোতা হয় যা জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশেষ উপযোগী। (যেমন -জলঢাকা)
(৭) নদীগুলোতে সারা বছর জল থাকে বলে জল সেচের সুবিধা হয়।
(৮) শীতের শুষ্ক ঋতুতেও এই নদীগুলোতে জল থাকে।
(৯) উত্তরবঙ্গে নদীগুলির সমভূমি অংশে নৌ চলাচলের উপযোগী।
(১০) উত্তরবঙ্গের নদীগুলির দৈর্ঘ্য বড় হয়।
(১১) উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু নদী বর্ষার জলে পুষ্ট। ফলে গ্রীষ্মকালে এইসব নদীর জল শুকিয়ে যায়। (যেমন লিস্, ঘিস্ ও মূর্তি)
(১২) উত্তরবঙ্গের নদীগুলি দক্ষিণ বাহিনী।
(১৩) উত্তরবঙ্গের নদীগুলির পার্বত্য প্রবাহে একাধিক জলপ্রপাত দেখা যায়।
(১৪) উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ নদীগুলি নবীন।
(১৫) নদীগুলি বাংলাদেশে প্রবেশ করে যমুনা ও পদ্মা নদীতে মিশেছে।
(১৬) এই অঞ্চলের প্রধান নদী তিস্তা, মহানন্দা, জলঢাকা, তোর্সা, রায়ডাক কালজানি, সংকোশ প্রভৃতি।
(১৭) এরা পার্বত্য ও সমভূমি অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত।
(১৮) সমভূমি অঞ্চল বাদে এইসব নদীগুলি নৌ-পরিবহনযোগ্য নয়।
পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের নদ নদী গুলির বৈশিষ্ট্য
(১) এই অঞ্চলের বেশিরভাগ নদ-নদী গুলির উৎপত্তিস্থল ছোটনাগপুর মালভূমি ও পশ্চিমের মালভূমি।
(২) এই অঞ্চলের নদী গুলি বৃষ্টির জলে পুষ্ট। ফলে নদীতে সারা বছর জলপ্রবাহ সমান থাকে না।
(৩) নদীগুলি স্রোত সমুদ্রমুখী।
(৪) এই অঞ্চলের নদীগুলিতে অতিবৃষ্টিতে বন্যার সৃষ্টি হয়।
(৫) নদী গুলির অধিকাংশই নৌ পরিবহনযোগ্য।
(৬) নদীগুলি পূর্ব বাহিনী।
(৭) সুবর্ণরেখা নদী বাদে এই অঞ্চলের বেশিরভাগ নদীই ভাগীরথী-হুগলী নদীতে মিশেছে।
(৮) নদীগুলি মাঝারি বা কম দৈর্ঘ্যের।
(৯) ভূমির ঢাল অনুসারে এই অঞ্চলের নদী গুলি পূর্ব বা দক্ষিণ পূর্বদিকে প্রবাহিত।
(১০) এই অঞ্চলের নদীগুলির প্রত্যেকটি ভাগীরথী হুগলি নদীর ডান তীরের নদী।
(১১) বর্তমানে এই অঞ্চলের নদনদী গুলোতে বাঁধ ও জলাধার নির্মাণ করে একাধারে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ কাজ এবং জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হচ্ছে।
(১২) এই অংশের প্রধান নদী ভাগীরথী, হুগলি, দামোদর, রূপনারায়ণ, কাঁসাই, ময়ূরাক্ষী, অজয়, ব্রাহ্মণী প্রভৃতি।
(১৩) এই অঞ্চলের নদী গুলি মালভূমি ও সমভূমি অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত।
(১৪) শীতের শুষ্ক ঋতুতে নদী খাতগুলি প্রায় শুকিয়ে যায়।
দক্ষিণবঙ্গ বা সুন্দরবন অঞ্চলের নদীগুলির বৈশিষ্ট্য
(১) দক্ষিণবঙ্গ বা সুন্দরবন অঞ্চলের নদী গুলি বেশিরভাগই জোয়ারের জলে পুষ্ট। তাই এদের জল লবণাক্ত।
(২) প্রত্যেকটি নদীই দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
(৩) নদীগুলি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযোগী নয়।
(৪) এই অঞ্চলের বেশিরভাগ নদীগুলি হুগলী নদীর শাখা নদী।
(৫) নদীগুলি একেবারে স্বল্প দৈর্ঘ্যের।
(৬) এই অঞ্চলের বেশিরভাগ নদীতে পলি সঞ্চয়ের ফলে বিভিন্ন দ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে।
(৭) এই অঞ্চলের নদীর দুই তীরবর্তী অঞ্চলে ম্যানগ্রোভ অরণ্য গড়ে ওঠায়, এই বনভূমির কাঠ সম্পদ স্থানীয় মানুষের অর্থনৈতিক চাহিদা মেটায়।
(৮) এই অঞ্চলের প্রত্যেকটি নদী শাখা নদী ও মূল নদী থেকে বিচ্ছিন্ন।
(৯) এই অঞ্চলে প্রবাহিত প্রত্যেকটি নদী বদ্বীপ গঠন করেছে।
(১০) জোয়ারের কারণে নদীগুলোতে মাঝে মাঝে বিপরীত স্রোত বা সমুদ্র যে দিকে বয় তার উল্টোদিকে স্রোত দেখা যায়।
(১১) এই অঞ্চলের নদী গুলি বর্তমান উৎস থেকে বিচ্ছিন্ন সমুদ্রের জলবাহী খাঁড়িতে পরিণত হয়েছে।
(১২) জোয়ারের সময় নদীগুলিতে জল থাকলেও ভাঁটার সময় জল একেবারেই কমে যায়।
(১৩) নদীগুলি দক্ষিণ বাহিনী।
(১৪) নদীগুলি বহু শাখা উপশাখায় বিভক্ত।
(১৫) এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য হলো সপ্তমুখী, পিয়ালী, গোসাবা, মাতলা, কালিন্দী, রায়মঙ্গল ইত্যাদি।