ভারতবর্ষে মোঘল সাম্রাজ্য

নমস্কার বন্ধুরা , আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় হল ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য। মধ্যযুগীয় ভারতের ইতিহাসে মুঘল সাম্রাজ্য অধ্যায়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষাগুলোতে এই অধ্যায় থেকে নানারকম প্রশ্ন এসে থাকে। ছোট বড় সব ধরনের প্রশ্ন উত্তর নিয়ে এখানে আলোচনা করা হবে।
ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য এই অধ্যায়টিকে আমরা কয়েকটি পর্বে বিভক্ত করে আলোচনা করব। তাই আর দেরি না করে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।

মুঘল সাম্রাজ্য আলোচনার সময়ে প্রথমেই আমাদের মাথায় একটি লাইন আসে সেটি হল “বাবার হইলো আবার জ্বর সারিল ঔষধে।” বাবার (বাবর) হইল (হুমায়ুন) আবার (আকবর) জ্বর (জাহাঙ্গীর) সারিল (শাহজাহান) ঔষধে (ঔরঙ্গজেব)।
১. বাবর (১৫২৬-১৫৩০ খ্রিস্টাব্দ)
২. হুমায়ুন (১৫৩০-১৫৪০) ও (১৫৫৫-১৫৫৬)
৩. আকবর (১৫৫৬-১৬০৫)
৪. জাহাঙ্গীর (১৬০৫-১৬২৭)
৫. শাহজাহান (১৬২৭-১৬৫৮)
৬. ঔরঙ্গজেব(১৬৫৮-১৭০৭)

বাবর

১. ভারতে মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
উঃ জহির উদ্দিন মহম্মদ বাবর।

২. মোঘল কথাটির উৎপত্তি হয়েছে কোন শব্দ থেকে?
উঃ “মোঙ্গল” কথাটি থেকে।

৩. মঙ্গলদের আদি বাসস্থান কোথায় ছিল?
উঃ মধ্য এশিয়ার মোঙ্গলিয়া।

৪. বাবর কথার অর্থ কি ?
উঃ তুর্কি ভাষায় বাবর করার অর্থ হলো সিংহ।

৫. কত খ্রিস্টাব্দে বাবরের জন্ম হয়?
উঃ ১৪৮৩ খ্রিস্টাব্দে ১৪ই ফেব্রুয়ারী।

৬. বাবর এর পূর্বপুরুষ কারা ছিলেন?
উঃ পিতৃকুলের দিক থেকে বিখ্যাত তুর্কি বীর তৈমুর লং এবং মাতৃকুলের দিক থেকে মঙ্গল বীর চেঙ্গিস খাঁ।

৭. বাবরের পিতার নাম কি?
উঃ ওমর শেখ মির্জা।

৮. কত বছর বয়সে বাবর ফারঘনা রাজ্যের সিংহাসনে বসেন?
উঃ ১২ বছর।

৯. কত বছর বয়সে তিনি সমরখন্দ দখল করেন?
উঃ ১৪ বছর বয়সে।

১০. কত খ্রিস্টাব্দে তিনি কাবুল রাজ্য দখল করেন?
উঃ ১৫০৪ খ্রিস্টাব্দে।

১১. বাবরকে ভারত আক্রমণের আমন্ত্রণ জানান কারা?
উঃ পাঞ্জাবের শাসনকর্তা দৌলত খাঁ লোদি এবং দিল্লির সিংহাসনের অন্যতম দাবিদার ইব্রাহিম লোদীর পিতৃব্য আলম খাঁ লোদি।

১২. বাবর কবে লাহোর দখল করেন?
উঃ ১৫২৪ খ্রিস্টাব্দে।

১৩. কত খ্রিস্টাব্দে বাবর পাঞ্জাব দখল করেন?
উঃ ১৫২৫ খ্রিস্টাব্দে, (দৌলত খাঁ লোদি কে পরাজিত করে )।

১৪. পানিপথের প্রথম যুদ্ধ কাদের মধ্যে হয়েছিল?
উঃ দিল্লির লোদী বংশের শেষ সুলতান ইব্রাহিম লোদী ও কাবুলের অধিপতি মোঘল বীর বাবরের মধ্যে ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের প্রথম যুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদী পরাজিত হন। বাবর দিল্লি ও আগ্রা দখল করে ভারতে মোগল সাম্রাজ্যের সূচনা করে।

১৫. পানিপথের প্রথম যুদ্ধের গুরুত্ব কী ছিল?
উঃ পানিপথের প্রথম যুদ্ধ ভারত ইতিহাসের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ। বাবরের গোলন্দাজ বাহিনীর কাছে ইব্রাহিম লোদী পরাজিত ও নিহত হন। এই যুদ্ধের ফলে লোদী বংশের শাসন ক্ষমতা চিরতরে অবলুপ্ত হয়, দিল্লি ও আগ্রা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল বাবরের অধিকারে আসে এবং জৌনপুর পর্যন্ত সমৃদ্ধশালী গঙ্গা যমুনা উপত্যকার দরজা তাঁর কাছে উন্মুক্ত হয়। আগ্রায় সঞ্চিত ইব্রাহিম লোদির ধনদৌলত বাবরের হস্তগত হয়। এই যুদ্ধের মাধ্যমে ভারতের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব বাবরের হাতে চলে যায়। সুলতানি যুগ শেষ হয়ে এদেশের ইতিহাসে আত্মপ্রকাশ করে বাদশাহী আমল। ঐতিহাসিকদের মতে পানিপথের যুদ্ধ ছিল ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য স্থাপনের প্রথম পদক্ষেপ মাত্র।

১৬. কবে কাদের মধ্যে খানুয়ার যুদ্ধ হয়েছিল? এর গুরুত্ব কি?
উঃ ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ই মার্চ খানুয়ার প্রান্তরে মেবারের রানা সংগ্রাম সিং ও বাবর এর মধ্যে খানুয়ার যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

ভারত ইতিহাসে খানুয়ার যুদ্ধ অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ডঃ কালীকিংকর দত্তের মতে, খানুয়ার যুদ্ধ ভারত ইতিহাসে সুনিশ্চিত ভাবে এক চূড়ান্ত যুদ্ধ — প্রকৃতপক্ষে এর ফলাফল পানিপথের যুদ্ধ অপেক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। (১) খানুয়ার পরাজয় ভারতের রাজনীতিতে রাজপুত শক্তির প্রাধান্য স্থাপনের সম্ভাবনা বিলুপ্ত করে। (২) এই যুদ্ধে জয়লাভ করায় বাবর তাঁর রাজনৈতিক শক্তির কেন্দ্রবিন্দু কাবুল থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করেন। (৩) এর ফলে ভারতে মুঘল শাসনের ভিত্তি সুদৃঢ় হয়।

খানুয়ার যুদ্ধে জয়লাভ না করলে বাবরের পানিপথের প্রথম যুদ্ধের জয় হয়তো নিষ্ফল হত।

১৭. কাকে পরাজিত করে বাবর চান্দেরি দুর্গ দখল করেন?
উঃ রানা সংগ্রাম সিংহের বিশ্বস্ত অনুচর মেদিনী রাই কে।

১৮. গোগরার যুদ্ধ বা ঘর্ঘরার যুদ্ধ কবে কাদের মধ্যে হয়েছিল? এই যুদ্ধের ফলাফল কি ছিল?
উঃ ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে ৬ই মে পাটনার কাছে গঙ্গা ও ঘর্ঘরা নদীর সঙ্গমস্থলে মৃত ইব্রাহিম লোদীর ভ্রাতা মামুদ লোদির নেতৃত্বে গঠিত আফগান বাহিনীর সঙ্গে বাবরের যে যুদ্ধ হয়, তা ইতিহাসে গোগরার যুদ্ধ বা ঘর্ঘরার যুদ্ধ নামে পরিচিত।

এই যুদ্ধের ফলে (১) নবগঠিত মুঘল আধিপত্য সুদৃঢ় হয়। (২) কাবুল থেকে ঘর্ঘরা এবং হিমালয় থেকে গোয়ালিয়র পর্যন্ত ব্যাপক স্থানে মুঘল সাম্রাজ্য বিস্তৃত হয়।

১৯. কত খ্রিস্টাব্দে বাবরের মৃত্যু হয়?
উঃ ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে ২৬ শে ডিসেম্বর ৪৭ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়।

২০. বাবরের বংশের নাম কি?
উঃ চাঘতাই তুর্কি।

২১. ভারতবর্ষে বাবর কত বছর রাজত্ব করেছিলেন?
উঃ চার বছর।

২২. বাবরের আত্মজীবনীর নাম কি? তাঁর আত্মজীবনী কোন ভাষায় রচিত?
উঃ বাবরের আত্মজীবনীর নাম ‘তুজুক-ই-বাবরি’ বা ‘বাবরনামা’। এটি তুর্কি ভাষায় রচিত।

২৩. বাবরের আত্মজীবনী টি ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন কে?
উঃ শ্রীমতি অ্যানেট বেভারিজ।

২৪. ‘খাত-ই-বাবরী’ কি?
উঃ বাবর প্রচলিত এক নতুন তুর্কী হরফ।

২৫. ভারতবর্ষে কে প্রথম যুদ্ধক্ষেত্রে কামান ও গোলা বারুদের ব্যবহার চালু করেন?
উঃ পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বাবর প্রথম কামানের ও গোলা বারুদের ব্যবহার করেছিলেন।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment