পশ্চিমবঙ্গের ভূ-প্রকৃতি

(২) পশ্চিমের উচ্চভূমি ও মালভূমি অঞ্চল
অবস্থান :- পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমে পুরুলিয়া,বাঁকুড়া, বীরভূম, বর্ধমান ও মেদিনীপুর জেলার পশ্চিম দিকের ৫০ মিটারের বেশি উচ্চতা যুক্ত অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়েছে পশ্চিমের মালভূমি ও উচ্চভূমি অঞ্চল। এই অঞ্চলটি ছোটনাগপুর মালভূমির অংশ বিশেষ যা গ্রানাইট ও নিস্ শিলা দ্বারা গঠিত। এই অঞ্চলটি বিহারের রাজমহল পাহাড় ও ছোটনাগপুর মালভূমির সঙ্গে যুক্ত।
ভূ-তত্ত্ব, ভূ-প্রকৃতি মৃত্তিকা ও অন্যান্য ভূগাঠনিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে পশ্চিমের এই মালভূমি অঞ্চলকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।– (ক) অযোধ্যা মালভূমি অঞ্চল (খ) পুরুলিয়া উচ্চভূমি অঞ্চল

(ক) অযোধ্যা মালভূমি অঞ্চল :- পুরুলিয়া জেলার সুবর্ণরেখা ও কংসাবতী নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে অযোধ্যা মালভূমি অঞ্চল অবস্থিত। এই অঞ্চলে অনেকগুলি গোলাকার খাড়া ঢাল বিশিষ্ট পাহাড় দেখা যায় যাকে মোনাডনক বলে। এখানকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাহাড়গুলিকে স্থানীয় ভাষায় ‘ডুংরি’বলে। পশ্চিমের এই মালভূমিতে রয়েছে অযোধ্যা ও বাগমুন্ডি পাহাড়। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের গোর্গাবুরু হল পশ্চিমবঙ্গের সমগ্র পশ্চিমের মালভূমির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এছাড়া পাঞ্চেত, বাগমুন্ডি,ম্যাকেনলি প্রভৃতি পাহাড়গুলি এই অংশে অবস্থিত। অযোধ্যা পাহাড়ে ব্রাহ্মণী নদীতে ব্রাহ্মণী জলপ্রপাত ও টুর্গা জলপ্রপাত অবস্থিত। এছাড়া সীতাকুন্ড নামে একটি আর্টেজীয় কুপ এই অংশে অবস্থিত যা থেকে সারাবছর নিজ থেকেই জল নির্গত হয়।

(খ) পুরুলিয়া উচ্চভূমি অঞ্চল :- অঞ্চলটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।


দক্ষিণে বরাভূম উচ্চভূমি :- পুরুলিয়া জেলার দক্ষিনাংশের এবড়ো খেবড়ো ভূমিভাগকে স্থানীয় ভাষায় বরাভূম বলে। এই স্থানে কিছু ক্ষয়জাত অবশিষ্ট পাহাড় দেখা যায় যাদের মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলপাহাড়ি ও ঠাকুরান উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া রয়েছে লাকাইসিনি, গড়হাসিনী পাহাড়।

পুরুলিয়া উচ্চভূমি :- অযোধ্যা মালভূমির পূর্বাংশ পুরুলিয়া উচ্চভূমি নামে পরিচিত। এই অংশে বেশ কয়েকটি টিলার মত পাহাড় দেখা যায় যাদের মধ্যে পাঞ্চেত, ভান্ডারী বেড়ো, গড় পঞ্চকোট, জয়চন্ডী ও খালাই চন্ডী উল্লেখযোগ্য।

উত্তর-পূর্বের শুশুনিয়া উচ্চভূমি :- এই অঞ্চলটিতে কঠিন প্রস্তরময় কয়েকটি ছোট ছোট পাহাড় দেখা যায়। বীরভূম জেলার মামা-ভাগ্নে ও মথুরাখালি, বাঁকুড়া জেলার বিহারীনাথ, শুশুনিয়া পাহাড় প্রভৃতি।

নদ-নদী :- এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে দামোদর নদ, কংসাবতী, রূপনারায়ন, সুবর্ণরেখা নদী, দ্বারকেশ্বর, কোপাই, ময়ূরাক্ষী, অজয়, দারোকা, ব্রাহ্মণী, বক্রেশ্বর প্রভৃতি নদী প্রবাহিত। নদী গুলির ক্ষয় কাজের ফলে পশ্চিমবঙ্গের এই উচ্চভূমি অঞ্চলটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে সমপ্রায় ভূমিতে পরিণত হয়েছে। দামোদর নদ কে বলা হয় বাংলার দুঃখ। সুবর্ণরেখা নদী এই মালভূমি থেকে রাঁচি মালভূমি কে পৃথক করেছে।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment